আজ ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদগাঁওতে চলছে ফসলি জমির টপসয়েল নিধনের মহোৎসব


নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে রাতের আধাঁরে ফসলি জমির টপ সয়েল নিধনের মহোৎসব চলছে। । তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে পুরো উপজেলার সিংহভাগ জমি চাষ অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরে জমিনে দেখা যায়,বিগত সপ্তাহকাল ধরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই ঈদগাঁও উপজেলার চাষযোগ্য বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলি জমিতে শতাধিক অবৈধ ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচল শুরু হয়। দেখা যায় রাতের আধাঁরে স্কেভেটর দিয়ে ফসল জমির টপসয়েল কেটে ডাম্পার ভর্তি করে মাটিখেকোরা উপজেলার অর্ধডজন ইটভাটা ও অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করে।রাতভর ধরে চলে পরিবেশ বিধ্বংসী এ অপকর্ম।

জমি মালিক ও নিরিহ কৃষকরা হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,বিগত কয়েক বছর শুষ্ক মৌসুম আসলেই আওয়ামীলীগ ও তার দোসররা অবৈধ ভাবে জোর কাটিয়ে তাদের চাষের জমির মাটি গুলো লুট করে নিয়ে যেত।তখনকার প্রশাসন তাদের সাথে বুঝাপড়ায় থাকত। যার কারণে মামলা,হামলা ও হয়রানির ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলার সাহস কেউ করতনা। যার ফল দাড়ায় উপজেলার চাষ যোগ্য জমি গুলো দিন গর্ত হয়ে যাওয়ায় চাষের অযোগ্য হয়ে উঠে। পুরো মৌসুম পানি জমে থাকায় কিংবা জমি গুলো উঁচু নিচু হয়ে যাওয়াতে পানি নিষ্কাশন কিংবা প্রয়োজনীয় সেচ দেয়া যায়না। যার কারণে ফলন হয়না।এভাবেই উপজেলা জুড়ে চাষ যোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমতে শুরু করে।

উপজেলার উল্লেখযোগ্য চাষের আবাদি জমি গুলো হচ্ছে ঈদগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজ পাড়া জাঁইক্কা কাটা বিল, জালালাবাদের ধনকাবিল,চৌফলদন্ডী বিল,পোকখালী বিল,ইসলামাবাদের পূর্ব -পশ্চিম বিল ও ইসলামপুর বিল।

এসব কৃষক ও জমি মালিকরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন,আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর তারা আশা করছিল আগেরমত তারা মাটি লুটেরাদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হবেনা।কিন্তু এখন হয়েছে তার উল্টো। আগের চাইতে আরো বেশি তারা চাষের জমি নিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে দাবি করছে। নব্য দোসরদের ছত্রছায়ায় পুরোনো মাটি খেকো আওয়ামী দোসররা আগের তুলনায় আরো বহুগুনে ফসলি জমির মাটি লুটে অর্ধডজন অবৈধ ইটভাটা ও নানা স্থানে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিনিময়ে তারা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে এসব করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে।

নয়ত ঈদগাঁও আয়তনের দিক দিয়ে অতি ছোট একটি উপজেলা। বলতে গেলে উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের নাকের ডগায় এ অপকর্ম রাতভর অবিরাম ভ অব্যাহত থাকলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে চোখে পড়েনি প্রশাসনকে।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ নিয়ে লেখা লেখি হলে নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা গত মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ইউএনও’র অভিযানকালে জমিতে মাটি কাটার দৈত্যকারের স্কেভেটর ও মাটি বহনে জড়িত অবৈধ ডাম্পার গুলো থাকলেও তা জব্দ করেনি রহস্যময় কারণে। ইউএনও চলে আসার পর আবারো পুরোদমে মাটি লুটের মহোৎসব চলতে থাকে।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান,ইউএনও গাড়ি জব্দ করে এক জনপ্রতিনিধির জিম্মায় দিলেও পরে এ গাড়ি কিভাবে ছাড়িয়ে নেয় জানা যায়নি। আবার অনেকে বলাবলি করছে ইউএনও’র নাম ভাঙ্গিয়ে এক জনপ্রতিনিধি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে মাটিবাহি অবৈধ ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচলে অনেক পথচারীকে অকালে জীবন দিতে হয়েছে। আবার অনেককে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।

জমি মালিক ও কৃষকদের দাবি বিগত এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলে আসছে। যদি তা বন্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে ঈদগাঁও উপজেলার আবাদি ফসলি জমির চাষাবাদ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে । তাই তারা অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বর্ণিত বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে কথা হলে জানান,গত মঙ্গলবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এক সিন্ডিকেটকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ঈদগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়ীত্ব) জাহিদ হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত এবং এভাবে টপসয়েল লুট অব্যাহত থাকলে আগামী চাষাবাদ মৌসুমে ব্যাপক প্রভাব পড়বে এতে সন্দেহ নেই। তিনি বিগত সপ্তাহেও এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং তিনি এ আবাদি জমি রক্ষায় প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর